নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- সাঈদ রিমন – মানুষকে সচেতন করার কাজ করেন দিন রাত। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে তিনি সচেতন মানুষ গড়ার কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। কখনো রাস্তা-ঘাটে। কখনো স্কুল-কলেজে। কখনোবা গণপরিবহনে। কিন্তু কেন? এ এক ইতিহাস। চোখের সামনে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যেতে দেখেছেন কাছের এক বড় ভাইকে।
এই মৃত্যু পীড়া দিতো তাকে। এ মৃত্যুই তাকে টেনে নেয় এ কাজে। তার কথা- মানুষ যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হলে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হবে। সাঈদ রিমন আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। এখন তিনি একজন বস্ত্র প্রকৌশলী। পড়ান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি বিবেকের তাড়নায় মানুষকে সচেতন করা তার এখন নিয়মিত রুটিন। প্রতিদিন সকালে অফিস টাইমের আগেই বের হয়ে পড়েন রাস্তায়। অফিসে যান গণপরিবহনে। ওই পরিবহণে লিফলেট বিতরন থেকে শুরু করে মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করেন তিনি।
মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন নিরাপদ সড়ক কিভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। সড়কের আইনকানুন, জেব্রাক্রসিং ব্যবহার, ওভার ব্রিজের ব্যবহার, জানালার পাশে মোবাইলফোনে সচেতন ভাবে কথা বলাসহ নানা বিষয়। প্রথমে মানুষ একটু অন্যভাবে নিলেও এখন সবাই ভালোভাবেই নিচ্ছে তাকে।
শুধু সড়ক নিরাপত্তায় নয়, মাদকের বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তুলেছেন তিনি। মাদকের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন স্লোগান পুলিশেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি নানা ভাবে অভিনয় করে সেগুলো ছোট ছোট ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আপলোড দেন। শুধু তাই নয় কখনো ছিনতাইকারী, মাস্তান, মলম পার্টির দলনেতা কিংবা মাদকাসক্তের বেশে দেখা যায় তাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনপদে একক অভিনয়ের শত শত স্থির চিত্রে তাকে দেখা যায় কখনও নিরীহ ছাত্র, কখনও দরিদ্র কৃষক, কখনও সুপারির ব্যাপারী আবার কখনওবা খারাপ মানুষের ভূমিকায়। আর এসব করেই তিনি জনসচেতনতা বাড়ান জনসাধরণের মাঝে। ছোট বেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আসক্তি ছিলো ভীষণ।
বন্ধুদের সহযোগিতায় জনসচেতনতা বাড়াতে একাধিক রম্য নাটক বানিয়েছেন। সেগুলো আবার বরগুনা শহরের স্থানীয় ক্যাবল টিভির মাধ্যমে প্রচারও করেছেন। তখন থেকেই তাকে চেনা শুরু করে মানুষ। তিনি নিজের অভিনয় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও রাস্তায় নেমে মানুষকে সচেতন করে বেড়ান।
সামাজিকমাধ্যমেও রিমন এ কাজ করে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। মাদকের মরণ ছোবল, যাত্রাপথে মলম পার্টির খপ্পর, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি, শ্রমিক নিপীড়ন, শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একক অভিনিত ছয় শতাধিত ছবি রয়েছে রিমনের ওয়ালে। এসব ছবিতে তিনি কখনো ঢাকার কাওরান বাজারে কাঁচাবাজারের ডালির ভেতরে ঘুমিয়ে রয়েছেন। কখনো চাকরি না পাওয়া বেকার যুবক।
সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হচ্ছেন। বগলে ফাইল, মাথায় হাত, চোখের কোণে পানি। কখনো মলম পার্টির সদস্য। বাসযাত্রীর মুখে রুমাল ধরছেন। কখনো রিকশাচালক। ভাড়া নিয়ে যাত্রী তার গালে চড় তুলেছেন।
কখনো ছিনতাইকারী। বাসযাত্রীর হাত থেকে মুঠোফোন ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছেন। রিমনের এসব ছবি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন বিলবোর্ড। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শত শত লাইক পেজে ব্যবহৃত হচ্ছে রিমনের এসব ছবি। সমপ্রতি রিমনের এসব ছবি নিয়ে বিল বোর্ড নির্মাণ করেছেন বরগুনা, নাটোর, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ পুলিশ। এছাড়া বিলবোর্ড, ব্যানার, স্টিকার ট্যুরিষ্ট পুলিশের অফিসিয়াল পেইজে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমদিকে সাঈদ রিমন জনসচেতনতামূলক ভিডিও নির্মাণ করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ভেবে দেখলেন পুরো একটি ভিডিও দেখিয়ে বার্তা পাঠানোর চেয়ে একটি স্টিল ছবির মাধ্যমে বার্তা পাঠানো সহজ। তারপর থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয় ধরে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করতে থাকেন। বিভিন্ন স্পটে গিয়ে সাঈদ রিমন ছবিগুলো ধারণ করেন।
অনেক সময় অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও তাকে সামাল দিতে হয়েছে। ২০১৫ সালে একবার এয়ারপোর্টে ছবি তুলতে গিয়েছিলেন। ছবির বিষয়বস্তু ছিল বিদেশ যাওয়ার পর প্রতারিত হয়ে ফিরে আসা। ছবি তোলার সময় এক অফিসার তাদের থামিয়ে দেন। এ নিয়ে জেরা করেন। পরে অবশ্য বুঝতে পেরে ওই কর্মকর্তা ছেড়ে দেন। কিন্তু ফার্মগেটে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ছবি তুলতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হয় তাকে। দৃশ্যটি ছিল কেউ একজন মোবাইলে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন, এমন সময় রিমন তা তুলে নেবেন ছিনতাইকারী সেজে। যার মোবাইল ফোন সে আর ফটোগ্রাফার জানতেন ঘটনাটি। কিন্তু পাশের মানুষজন জানতেন না। তিনি যখন মোবাইল ফোন তুলে নিচ্ছিলেন আশপাশের মানুষজন এসে তাকে ধরে ফেলে ছিনতাইকারী হিসেবে। পরে তাদের বোঝাতে সক্ষম হন যে তিনি ছিনতাইকারী নন।
সাঈদ রিমন বলেন, প্রথম প্রথম এসব ছবি মানুষ নেগেটিভ ভাবে ব্যবহার করতো। অনেকে মনে করতো আমিই মনে হয় চোর বা ছিনতাইকারী। পরে অবশ্য বিষয়টি সবাই বুঝতে পেরেছে। এখন সবাই সাধুবাদ জানায়। বর্তমানে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজে প্রচারণা চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করেছি অর্ধ লক্ষাধিক স্টিকার। আমার জনসচেতনতা-মূলক কিছু স্থিরচিত্র একটু সচেতনতাই পারে বড় ধরনে বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে নিজ উদ্যোগে লিফলেট ও স্টিকার তৈরি করে চালক, পথচারী, যাত্রীসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করি। এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুরুতে কিছুটা হয়েছিলো। এখন আর তেমন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় না। তবে নতুন সড়ক আইন করার পর গণপরিবহনে কথা বলতে গেলে চালক বা হেলপাররা মনে করেন আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি।
অথচ এ আইন তাদের জন্য কি পরিমান কাজে আসবে হয়তো তারা নিজেরাই জানেন না। আমার মনে হয় তাদেরকে এ আইনটির ব্যপারে ভুল বুঝানো হয়েছে। সাঈদ রিমন মনে করেন, বাংলাদেশে চালকদের মাঝে প্রচুর কর্মশালার প্রয়োজন।
এজন্য বাস মালিকপক্ষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন মালিকের যদি দশটি বাস থাকে, আর মোট ৪০ জন স্টাফ থাকে। তাদের নিয়ে ওই বাসমালিক সচেতনতামূলক কর্মশালা করতে পারেন। এজন্য তাদের সদিচ্ছা এবং ব্যক্তি উদ্যোগ প্রয়োজন। চালক সচেতন থাকলে তার নিজের গাড়িটিও দুর্ঘটনার কবল থেকে রেহাই পাবে।
I have read your article carefully and I agree with you very much. This has provided a great help for my thesis writing, and I will seriously improve it. However, I don’t know much about a certain place. Can you help me?