মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমাঃরাজধানীর তুরাগে আব্দুলাপুর- নবীনগর মহাসড়কের পাশে গাড়ি থেকে তেল চুরি, মাদক ব্যবসা ও ছিনতাই করা এক রকমের পেশায় পরিণত হয়েছে।
এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে সরাসরি গাড়ি থেকে জ্বালানি তেল অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও মাদক ক্রয়- বিক্রয় করার পাশাপাশি চুরি ছিনতাই করে থাকে । তাদের হিসাব আবার অন্য রকম, তা হলো লিটারে দুই লিটার, যার মূল্য প্রায় তিনের একাংশ টাকা পেয়ে থাকে গাড়ির ড্রাইভার ।
বিনিময়ে মাদক সেবী ড্রাইভাররা তাদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে গাঁজা ইয়াবা সহ নানা জাতের মাদক । ইতিপূর্বে এব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও তার কোন প্রতিকার হয়নি । প্রায় ২৪ ঘণ্টাই প্রকাশ্যে মাদক ও চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা করতে দেখা যায় । সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের লোকেরা পুলিশের কয়েকটি টিমকে টাকা দিয়ে থাকে ।
শুধু তাই নয়, থানায় মাসিক- সাপ্তাহিক মাসহারা দিয়ে থাকে তারা । এই প্রতিবেদকের নিকট কিছু প্রত্যক্ষদর্শিরা এমন কথাও বলে থাকে যে, তুরাগ থানা এলাকার আব্দুল্লাহপুর- নবীনগর মহাসড়কের পাশে মোট ৩টিরও বেশি মাদক ও তেলের স্পট রয়েছে ।
এই ৩টি স্পটের টাকা শুধু থানা পুলিশই পায়না, নামধারী কিছু নেতা ভুঁইফোড় কথিত সাংবাদিকও পেয়ে থাকে । সাহেব আলী মাদ্রাসার একটু পশ্চিমে, চোরাই জ্বালানি তৈল ও মাদক ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া (৫০) দম্ভ করে বলেন, আমি মাদারীপুরের লোক, সাবেক নৌ মন্ত্রী সাজাহান খান আমার আত্মীয় ।
তাছাড়া আমি স্থানীয় থানা পুলিশ সাংবাদিক ও এলাকার নেতাদের ম্যানেজ করেই এখানে দুইটি স্পট দ্বারা এই ব্যবসা করে থাকি । কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না । আপনার যদি কিছু দরকার হয় বলেন দিয়ে দেই চলে যান, ঝামেলার কোন দরকার নেই ।
ইতিপূর্বে আমার এই ব্যবসা নিয়ে কয়েকটি চ্যানেল ও পত্রিকায় অনেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে, তাতে আমার কিছুই হয়নি আর আপনি দু কলম লিখে আমার বিরুদ্ধে কি করতে পারবেন । তার পাশেই আরেক চোরাই তৈল ও মাদক ব্যবসায়ী রানা বলেন, আমি এলাকার স্থানীয় ও প্রভাবশালী জলিল মিয়ার লোক ।
আপনার চাইতে বাঘা বাঘা সাংবাদিক এখানে আসা যাওয়া করে, তারাই আমাকে বড় ভাই বলে সম্বোধন করে । আমরা স্থানীয় থানা পুলিশ সাংবাদিক ও এলাকার নেতাদের ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করে থাকি । কেউ আমার কিছু করতে পারবে না, এখন আপনি এখান থেকে কেটে পড়েন তা নাহলে আপনার বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানান, অনেক ড্রাইভার তেলের বিনিময়ে এদের কাছ থেকে মাদক নিয়ে যায়, আবার অনেকে এই স্পটে বসেই মাদক সেবন করে থাকে । আরেকটি গ্রুপ এখানে বসে মাদক সেবন করে ও সুযোগ বুঝে পথচারীদের গতিরোধ করে ছিনতাই করে থাকে ।
গত ২৯/২/২০২০ইং এই স্পটের সদস্যরা পথচারী আবুল খায়ের ও মারুফ নামে দুই ব্যক্তিকে পিস্তল ঠেকিয়ে ও ছুরি দ্বারা আঘাত করে তাদের মোবাইল, টাকা পয়সা সহ সর্বস্ব লুটে নেয় ।
পরে ভুক্তভোগী আবুল খায়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরের দিন ১/৩/২০২০ইং তারিখে তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ২ ।
মামলা হওয়ার পর থানার এস আই মোঃ ওয়াজিউর রহমান অভিযান চালিয়ে এই চক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ও ছিনতাইকৃত মালামাল কুদ্দুসের চোরাই তেলের স্পট থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় । বর্তমানে আটককৃতরা জেল হাজতে রয়েছে ।
তারপরেও এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি কুদ্দুস, জলিল ও রানার এসব অপকর্ম ।
এত সব অপকর্ম প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে । এলাকাবাসী এদের ভয়ে সবসময় আতংকিত, যদি তারা তাদের কোন ক্ষতি করে । এ ব্যাপারে জানতে, ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমি অবগত নই
যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানলাম, শীঘ্রই ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবো এবং এই ধরনের কোন অপকর্ম আমার এই ওয়ার্ডে চলতে দেওয়া হবেনা । আমি এই চোরাই তেলের স্পট ৩টি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো ।
এ ব্যাপারে জানতে, তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল মোত্তাকিনের মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও সে ফোন রিসিভ করেননি । পরবর্তী তুরাগ থানার ইন্সপেক্টর ( অপারেশন ) শেখ মফিজুল ইসলামের ব্যবহৃত মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর এ্যাসিস্ট্যান্ট পরিচয়ে একজন ফোন রিসিভ করে স্যার ট্রেনিংয়ে আছেন বলে ফোন রেখে দেন ।
Leave a Reply