এই রুমাল টা দেখেই তুমি বুঝতে পারছ যে এটা কতটা পুরনো।তোমার দাদু একদা এক গরীব বৃদ্ধকে ভয়ানক এক নেকড়ে দলের হাত থেকে বাঁচায়।তারপর নিজের ঘরে আশ্রয় দেয়।বৃদ্ধ অনেক ক্ষুধার্ত ছিল,তাই সে তার আহারের ব্যবস্থা করে।বৃদ্ধ অনেক খুশি হয় এবং আমার বাবাকে উপহার হিসেবে এই রুমালটা দেন।আমার বাবা সেটাকে একটা সাধারণ রুমাল মনে করেছিলেন,কিন্তু সেটা একজন বৃদ্ধের আশীর্বাদ হিসেবে নিজের কাছে সযত্নে রাখলেন।পরদিন সকালে সেই বৃদ্ধকে বাবা আর দেখতে পেলেন না।এমন কি ঐ এলাকার লোকদের জিজ্ঞেস করলে তারা কেউ কোনোদিন তাকে দেখেননি বলে উত্তর দিলেন।আমার বাবা খুব বেশি বড়লোক ছিলেন না।তবু তার দিন ভালোই কাটছিল।তবে দেখতে দেখতে বাবা তার ব্যবসায় খুব লাভবান হতে লাগলেন।তার কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেল।আগে তিনি গরীব দুঃখীদের সাহায্য করতেন।কিন্তু যত তিনি বড়লোক হতে লাগলেন তত তিনি লোভী হয়ে উঠলেন।আগের চেয়ে আরও সম্পত্তি অর্জন করতে চাইলেন।একদিন এক গরীব বালক তার ঘরে এলো এবং তাকে কিছু সাহায্য করতে বললো।বাবা তাকে পরে আসতে বললেন।কিন্তু সে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিল তাই আমার বাবাকে অনুরোধ করলো তাকে কিছু খেতে দেওয়ার জন্য।বাবা ব্যস্ত থাকার কারণে তাকে চলে যেতে বলল। কিন্তু বালক খানিকটা জোরাজুরি করতেই বাবা তাকে ধাক্কা দিল।বালক তাতে খুব কষ্ট পেল এবং চলে গেল। যাওয়ার সময় পেছন ফিরে বলে গেল: যা পেয়েছিলে তার যদি মর্ম বুঝতে পারতে তাহলে আজ এমন পাশবিক আচরণ করতে না।বাবা খুব অবাক হলো আর বলল:এ কথার অর্থ কি?
বালক বলল: তোমাকে যা দেওয়া হয়েছিল তা শুধুমাত্র মানব হিতৈষীদের দেওয়া হয়।এর ফলে তাদের যাবতীয় সম্পদ দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়।ইহজগতে তারা অনেক সম্মাননা পায়।তুমি এই শর্তের বাইরে। অর্থাৎ তুমি পরোপকারী নও।তাই তোমার বর্তমান ও পূর্বের যা ছিল তুমি সব হারাবে এবং খুব দ্রুতই সীমাহীন দুর্দশায় পতিত হবে। আশ্চর্যজনকভাবে বাবা সব হারালেন। আমার শৈশব ভয়ানক দারিদ্র্যে কেটেছিল।বাবা মারা যাওয়ার সময় রুমালটা আমার হাতে দিয়ে গেলেন এবং বললেন এটা সাবধানে রাখবে। ঈশ্বর চাইলে তুমি অথবা তোমার বংশের কেউ এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে।আমি অনেক চেষ্টা করেও এর দ্বারা কোনো উপকার পাইনি।যদিও আমি কখনো কারো অনিষ্ঠ করিনি তবে আমার বিশ্বাস তুমি এর দ্বারা উপকৃত হবে।
জেনি বলল।আমি তোমার কথা অবিশ্বাস করছিনা।কিন্তু যেখানে তুমিই এর দ্বারা কোনো সুফল পাওনি সেখানে আমি কি করে পাবো?
— ভরসা রাখ।আর সর্বদা মানুষের উপকার করবে। তাতেই হয়তো এর দ্বারাই তুমি তোমার সকল ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে।
জেনি তার বাবার কথা বিশ্বাস করল এবং সেই রুমাল নিজের কাছেই রেখে দিল।একদিন জেনি স্কুলে যাওয়ার পথে দেখল, একজন কাঠুরে, ভীষণভাবে আহত।তার পা কেটে রক্ত পড়ছে।জেনি ছুটে গেল।তার স্কার্ফ দিয়ে কাঠুরের পা বেধে দিল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে তাকে পানি পান করালো।কাঠুরে বেশ খুশি হলো, আর তাকে আশীর্বাদ করল।এই ঘটনার পর জেনি স্কুলে যায়,সেদিন স্কুলে একটা লটারি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।জেনি এসব জিনিস কখনও নিতনা কারণ সে জানে সে কখনই লটারি জিততে পারবেনা।জেনির বন্ধুরা তাকে জোরাজুরি করলে সে বাধ্য হয়েই একটা লটারি নিল।তার একসপ্তাহ পরে জেনির বাড়িতে একজন লোক এলো।তিনি বললেন, জেনি যে লটারি কিনেছিল, তা সে জিতে গেছে এবং প্রথম পুরষ্কার পেয়েছে।সেটা একটা প্যাকেটে মোড়ানো ছিল। লোকটা প্যাকেটটা দিয়েই চলে গেলেন। জেনি প্যাকেটটা খুলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।সেই পুরষ্কারটা আর কিছুই না বরং একটা মারমেইড স্কার্ট যা সে তার বাবার কাছে আবদার করেছিল।সে প্রচন্ড খুশি হলো,দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে দেখালো, জোসেফ বললেন, এটা তার পরোপকরীতার পুরস্কার।
(চলবে)
Leave a Reply