জেনি তো খুশিতে আটখানা।এতদিন তার আশা ছিল সে জীবনে যা চায় তা কোনো না কোনোভাবে সে পাবেই।জেনি প্রচন্ড জেদি আর একরোখা একটা মেয়ে।সে কখনও ভাবতেই পারেনা যেটা সে চায় সেটা সে পাবে না। এককথায় পেতেই হবে।অবশ্য তার জেদের পেছনে তার বাবার মেয়ের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা কিছুটা হলেও দায়ী।রুমালটা পেয়ে জেনির খুশির কারণ হয়তো তার পছন্দের জিনিস পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরনের সম্ভাবনা।দিন কাটতে লাগলো, জেনি রুমালটাকে সযত্নে নিজের কাছে রাখত।জেনি ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগল, রুমালটা পাওয়ার পর থেকে সে যা চাইছে তা খুব সহজেই সে পেয়ে যাচ্ছে। জোসেফ দেখল, জেনি পূর্বের তুলনায় বেশি হাসি-খুশি থাকছে। তাছাড়া, জেনি হয়তো কিছটা বদলেও গেছে।আগে সে অন্যরকম ছিল। মানুষের তেমন কোন সাহায্য তাকে করতে দেখা যেত না।তবে এখন দেখা যায়।এমনকি খুব সাধারণ বিষয়গুলোতেও জেনি কেমন গুরুত্ব দেখায়।জেনির এই পরিবর্তন বেশ ভালো লাগে জোসেফের।জোসেফের মন প্রায়ই খারাপ থাকত।কারন তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। এমনকি সে কাজেও যেতে পারছিল না।জেনি সর্বদাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকত।স্কুল, বন্ধুবান্ধব,সাজসজ্জা এসবই যেন তার পৃথিবী।বাবার দিকে খুব কমই নজর দিত সে।জেনি খুব ভালো নাচতে পারতো। নাচটাকে পাকাপোক্ত ভাবে রপ্ত করার জন্য একটা নাচের স্কুলে ভর্তি হলো।সেখানে তার সবচেয়ে ভালো বান্ধবী মারিয়াও নাচ শিখত।মারিয়ার একজন ডান্স পার্টনার ছিল নাম রিক।রিক দেখতে শুনতে বেশ ভালই ছিল।নিল চোখ, ঘাড় অবদি লম্বা চুল, সরু নাক,সুন্দর হাসি।এককথায় রাজপুত্র বললে খুব বেশি বলা হবেনা।রিক খুব ভালো বল ডান্স করতো।মারিয়া তার পার্টনার বলে
নিজেকে কিছুটা ভাগ্যবতী মনে করতো।অবশ্য না করারও কারণ ছিলনা, ডান্স স্কুলের সব মেয়েরাই চাইতো জোসেফের সাথে নাচতে।জেনির এসব দিকে আগ্রহ ছিলনা বললেই চলে।স্কুলে নতুন আসার কারণে জেনি মারিয়া ছাড়া তেমন কারো সাথে কথাও বলতনা।প্রায় সময় একা বসে থাকতো।রিক বেশ মিশুক ছিল,প্রায় সবার সাথেই কথা বলতো।জেনিকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে রিক জেনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো।প্রথম প্রথম জেনি তেমন একটা কথা বলতনা।রিক অনেক মজার মানুষ ছিল।জেনির সাথে অনেক ধরনের কথা বলতো সে।ঠাট্টা, মশকরা আরো কত কি।দেখতে দেখতে রিক জেনি খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো।যদিও জেনির কাছে সম্পর্কটা বন্ধুত্বকে ছাপিয়ে কিছুটা বেশিই হয়ে গিয়েছিল।জেনি নিজের অজান্তেই মনে মনে রিককে ভালোবাসতে শুরু করলো।বোধ হয় ভালবাসা থেকেই হিংসার সৃষ্টি হয়। জেনি রিককে কারো পাশে সহ্য করতে পারতো না।এমনকি কিছুদিন যাবত তার প্রিয় বান্ধবী মারিয়াও যদি রিকের সাথে কথা বলতো তাতেও জেনির ভাল লাগতো না।প্রথম প্রথম রিক ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি।কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো রিকের কাছে জেনির ব্যবহার কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলো।রিক সিদ্ধান্ত নিল জেনিকে সবটা খুলে বলে দেবে,যে সে কাউকে ভালোবাসে এবং তাকে ছাড়া অন্য কাউকেই সে তার জীবনে আনতে পারবেনা।ওদিকে জেনি মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনছে। বিষয়টি এমন ছিল না যে জেনি কিছুই বুঝতে পারতো না। জেনির মনে হতো রিক হয়তো কাউকে ভালবাসে।সেটা যে কেউই হতে পারে এমনকি জেনিও হতে পারে।যদিও রিক তার কোন কথার দ্বারা এমন কোন ইঙ্গিত কখনোই দেয়নি।জেনি ভাবলো রিক হয়তো তার অনুভূতি প্রকাশ করতে লজ্জা পাচ্ছে।তাই সে নিজেই সব বলে দেবে রিককে।দিন কেটে যেতে লাগলো, জেনি আর রিক দুজনই একটা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিল নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করার জন্য।সেই সময়ও হয়তো পেয়ে গেল জেনি।১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালবাসা দিবস, দিনটি খুব বেশি দূরে নয়।জেনি তার মনের কথা প্রকাশ করতে এর চেয়ে মোক্ষম সময় হয়তো আর পাবে না। নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলো জেনি।
(চলবে)
Leave a Reply